বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে কবিতা

Bangladesh independence Day Poems

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে জড়িত রয়েছে 30 লক্ষ শহীদের প্রাণ। এজন্য প্রতিবছরই বাংলাদেশ 26 শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। হাজার 1971 সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করে থাকি। এজন্য প্রতি বছরের 26 শে মার্চকে আমাদের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হয়। কিছুনা আজকের পোস্টটি আমরা সাজিয়েছি 26 শে মার্চ উপলক্ষে বিভিন্ন কবিতা আবৃত্তি নিয়ে।

আপনারা যারা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইন্টারনেটে কবিতা আবৃত্তি অনুসন্ধান করছেন?? তারা এখনই আমাদের ওয়েব আকর্ষণীয় সুন্দর কবিতা গুলো সংগ্রহ করতে পারেন। আমাদের কবিতাগুলো সাবলীল এবং সুন্দর। কবিতাগুলো আপনারা যে কোন অনুষ্ঠান কিংবা জনসম্মুখে করে শোনাতে পারেন। আমরা দেখতে পারি অনেক স্কুল-কলেজের মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় গ্রন্থাগারে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কবিতা আবৃত্তির প্রতিযোগিতা দেয়া হয়।

এখানে অনেক স্কুলের শিক্ষার্থীরা এসে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। তাই আপনারা এখনই আমাদের ওয়েবসাইট থেকে সুন্দর সাবলীল মহান স্বাধীনতা উপলক্ষে কবিতা গুলো সংগ্রহ করে। যে কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। আসুন দেখে নেই, বিখ্যাত ও গুণীদের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতার কবিতা আবৃত্তি গুলো।

স্বাধীনতা নিয়ে সিকান্দার আবু জাফরের কবিতা

সংগ্রাম চলবেই

সিকান্দার আবু জাফর

রক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলো

আজকে যখন হাতের মুঠোয় কণ্ঠনালীর খুন পিয়াসী ছুরি

কাজ কি তবে আগলে রেখে বুকের কাছে কেউটে সাপের ঝাপি

আমার হাতেই নিলাম আমার নির্ভরতার চাবি

তুমি আমার আকাশ থেকে সরাও তোমার ছায়া

তুমি বাংলা ছাড়ো


অনেক মাপের অনেক জুতোর দামে তোমার হাতে

দিয়েছি ফুল হৃদয় সুরভিত

সে ফুল খুঁজে পায়নি তোমার চিত্তরসের ছোঁয়া

পেয়েছে শুধু কঠিন জুতোর তলা

আজকে যখন তাদের স্মৃতি অসন্মানের বিষে

তিক্ত প্রানে শ্বাপদ নখের জ্বালা

কাজ কি চোখের প্রসন্নতায় লুকিয়ে রেখে প্রেতের অট্টহাসি

আমার কাঁধেই নিলাম তুলে আমার যত বোঝা

তুমি আমার বাতাস থেকে মুছো তোমার ধূলো

তুমি বাংলা ছাড়ো



একাগ্নতার স্বপ্ন বিনিময়ে মেঘ চেয়েছি

ভিজিয়ে নিতে যখন পোড়া মাটি

বারে বারেই তোমার খরা আমার খেতে বসিয়ে গেছে ঘাঁটি

আমার প্রীতি তোমার প্রতারনা

যোগ বিয়োগে মিলিয়ে

নিলে তোমার লাভের জটিল অন্কগুলো

আমার কেবল হাড় জুড়ালো হতাশ শ্বাসের ধূলো


আজকে যখন খুঁড়তে গিয়ে নিজের কবরখানা

আপন খুলির কোদাল দেখে সর্বনাশা বজ্র দিয়ে গড়া

কাজ কি দ্বিধায় বিষন্নতায় বন্দী রেখে ঘৃনার অগ্নিগিরি

আমার বুকেই ফিরিয়ে নেব ক্ষীপ্ত বাঘের থাবা

তুমি আমার জল স্থলের মাদুর থেকে নামো

তুমি বাংলা ছাড়ো

স্বাধীনতা নিয়ে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ কবিতা

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

  আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল

তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল।

তিনি অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা বলতেন

অরণ্য এবং শ্বাপদের কথা বলতেন

পতিত জমি আবাদের কথা বলতেন

তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।

জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা,

কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।

আমি উচ্চারিত সত্যের মতো

স্বপ্নের কথা বলছি।

উনুনের আগুনে আলোকিত

একটি উজ্জ্বল জানালার কথা বলছি।

আমি আমার মা’য়ের কথা বলছি,

তিনি বলতেন প্রবহমান নদী

যে সাতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে নদীতে ভাসতে পারে না।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে মাছের সঙ্গে খেলা করতে পারে না।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে মা’য়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতে পারে না

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

আমি বিচলিত স্নেহের কথা বলছি

গর্ভবতী বোনের মৃত্যুর কথা বলছি

আমি আমার ভালোবাসার কথা বলছি।

ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়

যুদ্ধ আসে ভালোবেসে

মা’য়ের ছেলেরা চলে যায়,

আমি আমার ভাইয়ের কথা বলছি।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে সন্তানের জন্য মরতে পারে না।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে ভালোবেসে যুদ্ধে যেতে পারে না।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে সূর্যকে হৃদপিন্ডে ধরে রাখতে পারে না।

আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি

আমি আমার পূর্ব পুরুষের কথা বলছি

তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল

কারণ তিনি ক্রীতদাস ছিলেন।

আমরা কি তা’র মতো কবিতার কথা বলতে পারবো,

আমরা কি তা’র মতো স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো!

তিনি মৃত্তিকার গভীরে

কর্ষণের কথা বলতেন

অবগাহিত ক্ষেত্রে

পরিচ্ছন্ন বীজ বপনের কথা বলতেন

সবত্সা গাভীর মত

দুগ্ধবতী শস্যের পরিচর্যার কথা বলতেন

তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।

যে কর্ষণ করে তাঁর প্রতিটি স্বেদবিন্দু কবিতা

কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।

যে কবিতা শুনতে জানে না

শস্যহীন প্রান্তর তাকে পরিহাস করবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে মাতৃস্তন্য থেকে বঞ্চিত হবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে আজন্ম ক্ষুধার্ত থেকে যাবে।

যখন প্রবঞ্চক ভূস্বামীর প্রচন্ড দাবদাহ

আমাদের শস্যকে বিপর্যস্ত করলো

তখন আমরা শ্রাবণের মেঘের মত

যূথবদ্ধ হলাম।

বর্ষণের স্নিগ্ধ প্রলেপে

মৃত মৃত্তিকাকে সঞ্জীবিত করলাম।

বারিসিক্ত ভূমিতে

পরিচ্ছন্ন বীজ বপন করলাম।

সুগঠিত স্বেদবিন্দুর মত

শস্যের সৌকর্য অবলোকন করলাম,

এবং এক অবিশ্বাস্য আঘ্রাণ

আনিঃশ্বাস গ্রহণ করলাম।

তখন বিষসর্প প্রভুগণ

অন্ধকার গহ্বরে প্রবেশ করলো

এবং আমরা ঘন সন্নিবিষ্ট তাম্রলিপির মত

রৌদ্রালোকে উদ্ভাসিত হলাম।

তখন আমরা সমবেত কন্ঠে

কবিতাকে ধারণ করলাম।

দিগন্ত বিদীর্ণ করা বজ্রের উদ্ভাসন কবিতা

রক্তজবার মত প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।

যে কবিতা শুনতে জানে না

পরভৃতের গ্লানি তাকে ভূলুন্ঠিত করবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

অভ্যূত্থানের জলোচ্ছ্বাস তাকে নতজানু করবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

পলিমাটির সৌরভ তাকে পরিত্যাগ করবে।

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

তিনি স্বপ্নের মত সত্য ভাষণের কথা বলতেন

সুপ্রাচীন সংগীতের আশ্চর্য ব্যাপ্তির কথা বলতেন

তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।

যখন কবিকে হত্যা করা হল

তখন আমরা নদী এবং সমুদ্রের মোহনার মত

সৌভ্রত্রে সম্মিলিত হলাম।

প্রজ্জ্বলিত সূর্যের মত অগ্নিগর্ভ হলাম।

ক্ষিপ্রগতি বিদ্যুতের মত

ত্রিভূবন পরিভ্রমণ করলাম।

এবং হিংস্র ঘাতক নতজানু হয়ে

কবিতার কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলো।

তখন আমরা দুঃখকে ক্রোধ

এবং ক্রোধকে আনন্দিত করলাম।

নদী এবং সমুদ্রে মোহনার মত

সম্মিলিত কন্ঠস্বর কবিতা

অবদমিত ক্রোধের আনন্দিত উত্সারণ কবিতা।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে তরঙ্গের সৌহার্দ থেকে বঞ্চিত হবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

নিঃসঙ্গ বিষাদ তাকে অভিশপ্ত করবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে মূক ও বধির থেকে যাবে।

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল

আমি একগুচ্ছ রক্তজবার কথা বলছি।

আমি জলোচ্ছ্বাসের মত

অভ্যূত্থানের কথা বলছি

উত্ক্ষিপ্ত নক্ষত্রের মত

কমলের চোখের কথা বলছি

প্রস্ফুটিত পুষ্পের মত

সহস্র ক্ষতের কথা বলছি

আমি নিরুদ্দিষ্ট সন্তানের জননীর কথা বলছি

আমি বহ্নমান মৃত্যু

এবং স্বাধীনতার কথা বলছি।

যখন রাজশক্তি আমাদের আঘাত করলো

তখন আমরা প্রাচীণ সংগীতের মত

ঋজু এবং সংহত হলাম।

পর্বত শৃংগের মত

মহাকাশকে স্পর্শ করলাম।

দিকচক্রবালের মত

দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলাম;

এবং শ্বেত সন্ত্রাসকে

সমূলে উত্পাটিত করলাম।

তখন আমরা নক্ষত্রপুঞ্জের মত

উজ্জ্বল এবং প্রশান্ত হলাম।

উত্ক্ষিপ্ত নক্ষত্রের প্রস্ফুটিত ক্ষতচিহ্ন কবিতা

স্পর্ধিত মধ্যাহ্নের আলোকিত উম্মোচন কবিতা।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে নীলিমাকে স্পর্শ করতে পারে না।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে মধ্যাহ্নের প্রত্যয়ে প্রদীপ্ত হতে পারে না।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে সন্ত্রাসের প্রতিহত করতে পারে না।

আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

আমি শ্রমজীবী মানুষের

উদ্বেল অভিযাত্রার কথা বলছি

আদিবাস অরণ্যের

অনার্য সংহতির কথা বলছি

শৃংখলিত বৃক্ষের

উর্দ্ধমুখী অহংকারের কথা বলছি,

আমি অতীত এবং সমকালের কথা বলছি।

শৃংখলিত বৃক্ষের উর্দ্ধমুখী অহংকার কবিতা

আদিবাস অরণ্যের অনার্য সংহতি কবিতা।

যে কবিতা শুনতে জানে না

যূথভ্রষ্ট বিশৃংখলা তাকে বিপর্যস্ত করবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

বিভ্রান্ত অবক্ষয় তাকে দৃষ্টিহীন করবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে আজন্ম হীনমন্য থেকে যাবে।

যখন আমরা নগরীতে প্রবেশ করলাম

তখন চতুর্দিকে ক্ষুধা।

নিঃসঙ্গ মৃত্তিকা শস্যহীন

ফলবতী বৃক্ষরাজি নিস্ফল

এবং ভাসমান ভূখন্ডের মত

ছিন্নমূল মানুষেরা ক্ষুধার্ত।

যখন আমরা নগরীতে প্রবেশ করলাম

তখন আদিগন্ত বিশৃংখলা।

নিরুদ্দিষ্ট সন্তানের জননী শোকসন্তপ্ত

দীর্ঘদেহ পুত্রগণ বিভ্রান্ত

এবং রক্তবর্ণ কমলের মত

বিস্ফোরিত নেত্র দৃষ্টিহীন।

তখন আমরা পূর্বপুরুষকে

স্মরণ করলাম।

প্রপিতামহের বীর গাঁথা

স্মরণ করলাম।

আদিবাসী অরণ্য এবং নতজানু শ্বাপদের কথা

স্মরণ করলাম।

তখন আমরা পর্বতের মত অবিচল

এবং ধ্রুবনক্ষত্রের মত স্থির লক্ষ্য হলাম।

আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

আমি স্থির লক্ষ্য মানুষের

সশস্ত্র অভ্যুত্থানের কথা বলছি

শ্রেণীযুদ্ধের অলিন্দে

ইতিহাসের বিচরণের কথা বলছি

আমি ইতিহাস এবং স্বপ্নের কথা বলছি।

স্বপ্নের মত সত্যভাষণ ইতিহাস

ইতিহাসের আনন্দিত অভিজ্ঞান কবিতা

যে বিনিদ্র সে স্বপ্ন দেখতে পারে না

যে অসুখী সে কবিতা লিখতে পারে না।

যে উদ্গত অংকুরের মত আনন্দিত

সে কবি

যে সত্যের মত স্বপ্নভাবী

সে কবি

যখন মানুষ মানুষকে ভালবাসবে

তখন প্রত্যেকে কবি।

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

আমি বিচলিত বর্তমান

এবং অন্তিম সংগ্রামের কথা বলছি।

খন্ডযুদ্ধের বিরতিতে

আমরা ভূমি কর্ষণ করেছি।

হত্যা এবং ঘাতকের সংকীর্ণ ছায়াপথে

পরিচ্ছন্ন বীজ বপন করেছি।

এবং প্রবহমান নদীর সুকুমার দাক্ষিণ্যে

শস্যের পরিচর্যা করছি।

আমাদের মুখাবয়ব অসুন্দর

কারণ বিকৃতির প্রতি ঘৃণা

মানুষকে কুশ্রী করে দ্যায়।

আমাদের কণ্ঠস্বর রূঢ়

কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

কণ্ঠকে কর্কশ করে তোলে।

আমাদের পৃষ্ঠদেশে নাক্ষত্রিক ক্ষতচিহ্ন

কারণ উচ্চারিত শব্দ আশ্চর্য বিশ্বাসঘাতক

আমাদেরকে বারবার বধ্যভূমিতে উপনীত করেছে।

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

আমার সন্তানেরা

আমি তোমাদের বলছি।

যেদিন প্রতিটি উচ্চারিত শব্দ

সূর্যের মত সত্য হবে

সেই ভবিষ্যতের কথা বলছি,

সেই ভবিষ্যতের কবিতার কথা বলছি।

আমি বিষসর্প প্রভুদের

চির প্রয়াণের কথা বলছি

দ্বন্দ্ব এবং বিরোধের

পরিসমাপ্তির কথা বলছি

সুতীব্র ঘৃণার

চূড়ান্ত অবসানের কথা বলছি।

আমি সুপুরুষ ভালবাসার

সুকণ্ঠ সংগীতের কথা বলছি।

যে কর্ষণ করে

শস্যের সম্ভার তাকে সমৃদ্ধ করবে।

যে মত্স্য লালন করে

প্রবহমান নদী তাকে পুরস্কৃত করবে।

যে গাভীর পরিচর্যা করে

জননীর আশীর্বাদ তাকে দীর্ঘায়ু করবে।

যে লৌহখন্ডকে প্রজ্জ্বলিত করে

ইস্পাতের তরবারি তাকে সশস্ত্র করবে।

দীর্ঘদেহ পুত্রগণ

আমি তোমাদের বলছি।

আমি আমার মায়ের কথা বলছি

বোনের মৃত্যুর কথা বলছি

ভাইয়ের যুদ্ধের কথা বলছি

আমি আমার ভালবাসার কথা বলছি।

আমি কবি এবং কবিতার কথা বলছি।

সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান কবিতা

সুপুরুষ ভালবাসার সুকণ্ঠ সংগীত কবিতা

জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি মুক্ত শব্দ কবিতা

রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।

আমরা কি তাঁর মত কবিতার কথা বলতে পারবো

আমরা কি তাঁর মত স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো ?


স্বাধীনতা নিয়ে অ্যালেন গিন্সবার্গ কবিতা

সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড

  অ্যালেন গিন্সবার্গ

শত শত চোখ আকাশটা দেখে, শত শত শত মানুষের দল,

যশোর রোডের দুধারে বসত বাঁশের ছাউনি কাদামাটি জল।

কাদামাটি মাখা মানুষের দল, গাদাগাদি করে আকাশটা দেখে,

আকাশে বসত মরা ইশ্বর, নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে।

ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে, যুদ্ধে ছিন্ন ঘর বাড়ী দেশ,

মাথার ভিতরে বোমারু বিমান, এই কালোরাত কবে হবে শেষ।

শত শত মুখ হায় একাত্তর যশোর রোডযে কত কথা বলে,

এত মরা মুখ আধমরা পায়ে পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে।

সময় চলেছে রাজপথ ধরে যশোর রোডেতে মানুষ মিছিল,

সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর, গরুগাড়ী কাদা রাস্তা পিছিল

লক্ষ মানুষ ভাত চেয়ে মরে, লক্ষ মানুষ শোকে ভেসে যায়,

ঘরহীন ভাসে শত শত লোক লক্ষ জননী পাগলের প্রায়।

রিফিউজি ঘরে খিদে পাওয়া শিশু, পেটগুলো সব ফুলে ফেঁপে ওঠে

এইটুকু শিশু এতবড় চোখ দিশেহারা মা কারকাছে ছোটে।

সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর, এত এত শুধু মানুষের মুখ,

যুদ্ধ মৃত্যু তবুও স্বপ্ন ফসলের মাঠ ফেলে আসা সুখ।

কারকাছে বলি ভাতরূটি কথা, কাকে বলি করো, করো করো ত্রান,

কাকে বলি, ওগো মৃত্যু থামাও, মরে যাওয়া বুকে এনে দাও প্রান।

কাঁদো কাঁদো তুমি মানুষের দল তোমার শরীর ক্ষত দিয়ে ঢাকা,

জননীর কোলে আধপেটা শিশু একেমন বাঁচা, বেঁচে মরে থাকা।

ছোটো ছোটো তুমি মানুষের দল, তোমার ঘরেও মৃত্যুর ছায়া,

গুলিতে ছিন্ন দেহ মন মাটি, ঘর ছেড়েছোতো মাটি মিছে মায়া।

সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর, ঘর ভেঙে গেছে যুদ্ধের ঝড়ে,

যশোর রোডের দুধারে মানুষ এত এত লোক শুধু কেনো মরে।

শত শত চোখ আকাশটা দেখে, শত শত শত শিশু মরে গেল,

যশোর রোডের যুদ্ধ ক্ষেত্রে ছেঁড়া সংসার সব এলোমেলো

কাদামাটি মাখা মানুষের দল, গাদাগাদি করে আকাশটা দেখে,

আকাশে বসত মরা ইশ্বর, নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে।

ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে, যুদ্ধে ছিন্ন ঘর বাড়ী দেশ,

মাথার ভিতরে বোমারু বিমান, এই কালোরাত কবে হবে শেষ।

শত শত মুখ হায় একাত্তর যশোর রোডযে কত কথা বলে,

এত মরা মুখ আধমরা পায়ে পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে,

এত মরা মুখ আধমরা পায়ে পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে॥

স্বাধীনতা নিয়ে মোঃ শহিদুল্লাহ কবিতা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং গুরুত্ব কে স্মরণ করে শহীদুল্লাহ একটি কবিতা লিখেছেন যা হলো বাতাসে লাশের গন্ধ পাই।

বাতাসে লাশের গন্ধ 

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই

আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,

ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…

এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?

বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে

মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।

এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।

জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর,

আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।

এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী,

স্বাধীনতা – একি হবে নষ্ট জন্ম ?

একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ?

জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।




বাতাশে লাশের গন্ধ

নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান।

মাটিতে রক্তের দাগ –

চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়

এ চোখে ঘুম আসেনা। সারারাত আমার ঘুম আসেনা-

তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,

নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ

মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর

ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি

ঘুমুতে পারিনা…

রক্তের কাফনে মোড়া – কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে

সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।

স্বাধীনতা, সে আমার – স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন –

স্বাধীনতা – আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।

ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।

স্বাধীনতা সম্পর্কে কবি শামসুর রহমানের কবিতা

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা

– কবি শামসুর রাহমান

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,

তোমাকে পাওয়ার জন্যে

আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?

আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,


সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,

সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।

তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,

শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো

দানবের মত চিত্কার করতে করতে

তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,

ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল

আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।

তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।

তুমি আসবে ব’লে, বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভূর বাস্তুভিটার

ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।

তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,

অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।


তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে

আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?

আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুড়ো

উদাস দাওয়ায় ব’সে আছেন – তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের

দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নড়ছে চুল।

স্বাধীনতা, তোমার জন্যে

মোল্লাবাড়ির এক বিধবা দাঁড়িয়ে আছে

নড়বড়ে খুঁটি ধ’রে দগ্ধ ঘরের।


স্বাধীনতা, তোমার জন্যে

হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে

বসে আছে পথের ধারে।

তোমার জন্যে,

সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,

কেষ্ট দাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,

মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,

গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝড়ে

রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস

এখন পোকার দখলে

আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুড়ে বেড়ানো

সেই তেজী তরুণ যার পদভারে

একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে —

সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।


পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জলন্ত

ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে,

মতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক

এই বাংলায়

তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।

উপরের আমাদের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কবিতা গুলো ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। এছাড়াও 26 শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ছবি মেসেজ, সঙ্গীত, রয়েছে এগুলো চাইলে আপনারা দেখতে পারেন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।

About Info24

আমি সাইফ ইসলাম প্রান্ত। আমি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন ছাত্র। ব্লগিং করতে ভালো লাগে। আমার ওয়েবসাইটে আপনারা সকল প্রকার তথ্য সঠিক ও নির্ভুলভাবে পেয়ে থাকবেন।

View all posts by Info24 →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *